মোবাইলে লিখালিখি

Story | 477 | Post by : manush | Date: 12-07-24
মোবাইলে লিখালিখির কথা বললেই কবি নির্মলেন্দু গুণের নাম আসবে। তার একটি কাব্যগ্রন্থ আছে, নাম ‘মুঠোফোনের কাব্য‘। এই বইয়ের কবিতাগুলো নাকি তিনি মোবাইলে লিখেছেন। চলতি পথে যখনই তার মনে ভাবের উদয় হয়েছে, তিনি সেগুলো মোবাইলে টুকে রেখেছেন৷ পরে অবসরে সেগুলোকে ঘষে মেজে চূড়ান্ত করেছেন। এ কারণেই বইয়ের নাম মুঠোফোনের কাব্য। কবি যখন এই কাজ করেছেন, ২০০৩ সালে, তখন স্মার্ট ফোন সম্ভবত আবিষ্কৃতই হয়নি, মোবাইলে বাংলা ফন্টও সহজলভ্য ছিল না। এমনকি, লিখার জন্য মোবাইলে লিখালিখির জন্য কোন এপ্লিকেশনও থাকতো না। মেসেজে সাতশর বেশি ক্যারেক্টার লিখার সুযোগ ছিল, সেখানেই লিখে ড্রাফট করে রাখতে হতো। সুতরাং কবি যে প্রচন্ড সংগ্রাম করে লিখেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কেন মোবাইলে লিখালিখি মোবাইলে বাংলা লেখার অ্যাপস লিখালিখির অ্যাপস মোবাইলে লিখালিখির সমস্যা বেসিক ফোনে লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন এমন আরেকজনের নাম জানি। আখতারুজ্জামান আজাদ, ছড়াকার। তিনি বিশাল বিশাল ফেসবুক পোস্ট এবং ছড়া লিখে ফেসবুকে পোস্ট করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার গোটা দশেক বই বেরিয়ে গিয়েছে, শীঘ্রই তিনি এক নামে চেনার মত বিখ্যাত হয়ে যাবেন বলে বিশ্বাস করি। আমার প্রিয় বন্ধু সাকিব শাহরিয়ার একজন উদীয়মান ঔপন্যাসিক। তার দুটো বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, তৃতীয় উপন্যাসও সমাপ্ত হয়েছে, প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। তার এই তিনটি উপন্যাসই মোবাইলে লিখা হয়েছে, তবে বেসিক ফোনে নয়, স্মার্টফোনে। দেশের বাহিরেও অনেক লেখক আছেন, বিশেষ করে যারা অন্য পেশায় যুক্ত থেকে লিখালিখি করেন, তারা মোবাইল ফোনকেই লিখালিখির জন্য বেছে নিয়েছেন। বলে নেয়া ভালো, মোবাইলে লিখালিখি বলতে আমি নিছক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া, মন্তব্য করা ইত্যাদিকে বুঝাইনি বরং সময় নিয়ে চিন্তা ভাবনার সন্নিবেশ ঘটিয়ে যুক্তি তর্ক উদাহরণ ইত্যাদি উপস্থাপন করে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়ায় প্রকাশযোগ্য কিছুকেই লেখালিখি বলছি। কেন মোবাইলে লিখালিখি লিখালিখির জন্য হোক বা ফেসবুকিং – ডেস্কটপ কম্পিউটার আমার প্রথম পছন্দ। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমি মোবাইলে লিখালিখি শুরু করেছি অনেকটা বাধ্য হয়ে এবং তাও মাত্র দেড় থেকে দুই বছর আগে। কর্মস্থল পাল্টানোর কারণে হঠাৎ করে আমার সময় নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেল। রাস্তায় থাকতে হয় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা, বাসায় ফিরেও কম্পিউটারে বসার আগ্রহ পাই না। ফলে মোবাইলের উপর ভর করতে হলো। প্রধানত দুটো উদ্দেশ্য। এক, সময়কে কাজে লাগানো এবং দুই, লিখালিখির চর্চা চালিয়ে যাওয়া৷ মোবাইলে বাংলা লেখার অ্যাপস বাংলায় লিখালিখির জন্য রিদমিক অ্যাপস শ্রেষ্ঠ। যদিও গুগলের কি-বোর্ডও খারাপ না। তবে অভ্যস্ততার উপর পছন্দ নির্ভর করতে পারে। রিদমিক কি-বোর্ডে চার ধরণের কি-বোর্ড ব্যবহার করার সুযোগ আছে, আমি কেবল ইংরেজি আর অভ্র – এই দুটো অপশন চালু রাখি। বুঝতেই পারছেন – মোবাইলে বাংলা লেখার জন্য আমি বাংলিশ স্টাইলে টাইপ করি। অর্থ্যাৎ – ami লিখলে ‘আমি’ হয়ে যায়। রিদমিক-এ অভ্র কি-বোর্ড লেআউট ব্যবহার করার পেছনে আমার যুক্তি হলো – মোবাইলে বাংলায় লিখার সুযোগ তৈরীর অনেক আগে থেকেই আমরা বাংলিশে বা ল্যাটিন অক্ষর ব্যবহার করে বাংলায় লিখে অভ্যস্ত ছিলাম। ফলে, নতুন করে কোন অক্ষর কোথায় আছে সেটা মুখস্ত করার ঝামেলায় যেতে চাইনি। ইংরেজি আর অভ্র – দুই কি-বোর্ড লেআউটেই অক্ষরগুলো একই জায়গায় থাকায় বাংলায় লিখা সহজ হয়েছে। আপনারাও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। লিখালিখির অ্যাপস মোবাইলে লিখালিখির জন্য আমি বিভিন্ন এপ্লিকেশন ব্যবহার করেছি। শুধু লিখালিখির জন্য অনেকগুলো এন্ড্রয়েড এপ্লিকেশন আছে। গ্রামারলি, জটারপ্যাড, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, সেগুলো অনেক কাস্টমাইজড। এই অ্যাপসগুলোতে আপনার উদ্দেশ্য অনুযায়ী লিখার ফরম্যাট বাছাই করার সুযোগ আছে। এছাড়া, ফরম্যাটিং এর জন্য প্রচুর অপশন আছে, ফলে কম্পিউটারে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহারের সুবিধাগুলো মোবাইলেই পেতে পারেন। এছাড়া, স্ক্রিপ্ট, উপন্যাস ইত্যাদি লিখার জন্যও কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করা সম্ভব। আমি আলাদা কোন অ্যাপস সাজেস্ট করছি না। বলা বাহুল্য, উপরের অ্যাপগুলোর কোনটাই আমার ভালো লাগলো না। লেখার ক্ষেত্রে আমি ঢং কম করি, ফলে শব্দ বোল্ড, ইটালিক বা আন্ডারলাইনড করা অথবা বিভিন্ন রং/ডিজাইনের ফন্ট ব্যবহার করার প্রয়োজন আমার হয় না। মোবাইলে অযথা এপ্লিকেশন ব্যবহার করার পক্ষপাতিও নই। ফলে গুগল কিপ ছাড়া আমার অন্য কোন এপ্লিকেশন পছন্দ হয় নি। গুগল কিপ-এ আগে বোল্ড-ইটালিক ইত্যাদি ফরম্যাটিং এর সুযোগ ছিল না, সম্প্রতি যুক্ত করা হয়েছে। আমার কাছে গুগল কিপ ব্যবহারের প্রধান দুটো সুবিধা। এক, আমি যে কোন ডিভাইসেই লিখতে পারছি। কারণ যা লিখছি তা ক্লাউডে জমা হচ্ছে এবং সিঙ্ক হয়ে যাচ্ছে। দুই, গুগল কিপ ব্যবহার করে আমার চেকলিস্ট, টু ডু লিস্ট টাইপের কাজগুলোও করতে পারছি। এই সুবিধাগুলো প্রায় সব অ্যাপসেই আছে। মোবাইলে লিখালিখির সমস্যা মোবাইলে লিখালিখির কিছু সমস্যাও আছে। ঘরে বসে লিখলে সমস্যা হয় না, কিন্তু বাইরে লিখলে উৎসুক জনতা পড়ার চেষ্টা করে, এতে মনযোগের বিঘ্ন ঘটে, বিরক্তিও তৈরি হয়। এইমাত্র হোয়াটসঅ্যাপে একটা মেসেজ আসলো – এটাও মোবাইলে লিখার অন্যতম সমস্যা। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো – লেখার প্যাটার্ন। আমি অনুভব করতে পারছি, মোবাইলে এবং ডেস্কটপে লেখার মধ্যে গুণগত পার্থক্য হয়। যেমন, মোবাইলে অল্প লেখা হলেই মনে হয় অনেক লেখা হয়ে গিয়েছে। তখন মনের ভেতর থেকে লেখা শেষ করা বা সংক্ষেপ করার তাড়না তৈরি হয়। এমনকি বাক্যগঠনও প্রভাবিত হয় মোবাইলে লিখতে গেলে। আমি প্রায়ই কোন লেখা রিভাইস করার সময় দুটি বাক্যের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি দেখতে পাই। অনেক সময় নতুন করে লিখতে হয়। এটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন রকম হতে পারে৷ সবচেয়ে বড় ব্যাপার, মোবাইলে লিখতে সময় অনেক বেশি ব্যয় হয়। তবে এই সময় যদি রাস্তাঘাটে ব্যয় হয় তখন সেটা অপচয় না হয়ে সময়ের যথার্থ ব্যবহার হয়। এটাও মোবাইলে লেখা হলো। আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন?